বাংলা শব্দগঠন (উপসর্গ,সমাস) এর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
বাংলা ২য় পত্রের ব্যাকরণ অংশের প্রশ্ন নং-৪ এ আসে বাংলা শব্দগঠন অর্থাৎ উপসর্গ ও সমাস থেকে। এখানে ২ টি প্রশ্ন থাকবে। একটি উপসর্গ, সমাস সংক্রান্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন এবং অন্যটি ব্যাসবাক্য সহ সমাস নির্ণয় করতে বলবে। আজজের এই আর্টিকেলে বাংলা শব্দগঠন অংশের আসা বিগত বোর্ড প্রশ্ন এবং শতভাগ কমনের কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরব।
প্রশ্নোত্তর গুলোর পিডিএফ ফাইল সবার শেষের অংশে দেওয়া আছে।
শব্দ গঠন বলতে কী বোঝো? বাংলা শব্দ গঠনের উপায়সমূহ আলোচনা করো। [চ.বো. ১৭,১৫]
উত্তর: শব্দ গঠন: পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার মতো বাংলা ভাষায়ও কতকগুলো সুনির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয়। এই শব্দ তৈরির প্রক্রিয়াও যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়। বৈচিত্র্যময় শব্দ তৈরির এই প্রক্রিয়াসমূহকেই সাধারণভাবে শব্দ গঠন বলা যেতে পারে। শব্দ গঠনের উল্লেখযোগ্য প্রক্রিয়াগুলো হলো- সন্ধি, সমাস, প্রত্যয়, উপসর্গ, বিভক্তি, বিদেশি শব্দের বিকৃত উচ্চারণ, ভাবানুবাদ ইত্যাদি। নিম্নে শব্দ গঠনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপায় আলোচনা করা হলো:
উপসর্গযোগে শব্দ গঠন: এই প্রক্রিয়ায় ধাতু বা শব্দের পূর্বে উপসর্গ যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করে।
যথা: প্রতি+রোধ = প্রতিরোধ, উপ+শহর=উপশহর ইত্যাদি।
প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন: এ ক্ষেত্রে ধাতু বা শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত দুভাবে শব্দ গঠিত হয়ে থাকে। যেমন:
(ক) কৃত্ প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন: যথা: পড়্+আ, পঠ্+অক = পাঠক ইত্যাদি।
(খ) তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন: যথা: পশ্চিম +আ=পশ্চিমা, নাম + তা = নামতা, ঢাকা+আই=ঢাকাই।
সমাসের সাহায্যে শব্দ গঠন: দুই বা ততোধিক পথ এক পদে পরিণত হয়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করে।
যথা: বছর বছর = ফি বছর। নীল যে আকাশ = নীলাকাশ, কবিদিগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ = কবিশ্রেষ্ঠ।
সন্ধির সাহায্যে শব্দ গঠন: এই প্রক্রিয়ায় পাশাপাশি দুটি বর্ণের একত্রীকরণ ঘটে এবং নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয়।
যেমন: হিম+আলয় = হিমালয়, পর+উপকার = পরোপকার ইত্যাদি।
বিভক্তির সাহায্যে শব্দ গঠন: এ ক্ষেত্রে কতকগুলো বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে একধরনের নতুন শব্দ তৈরি করে।
যেমন: কর+এ = করে, রহিম+এর=রহিমের ইত্যাদি।
দ্বিরুক্ত শব্দ বা দ্বিরাবৃত্তির মাধ্যমে: দ্বিরুক্ত শব্দ বা দ্বিরাবৃত্তির মাধ্যমে বাংলায় প্রচুর শব্দ তৈরি হয়।
যেমন: ঠনঠন, শনশন, মোটামুটি, তাড়াতাড়ি ইত্যাদি।
বিদেশি শব্দের উচ্চারণ বিকৃতি: বিদেশি শব্দের উচ্চারণ বিকৃতি ঘটেও বাংলা ভাষায় বেশ কিছু শব্দ তৈরি হয়েছে।
যেমন: টিপকল, আপিস ইত্যাদি।
অনুবাদের মাধ্যমে: বিদেশি শব্দের অনুবাদের মাধ্যমেও বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ হয়েছে।
যেমন: সিংহভাগ, ভূমিপুত্র ইত্যাদি।
উপসর্গের সংজ্ঞা দাও? বাংলা শব্দ গঠনে উপসর্গের ভূমিকা বা গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: যেসব অব্যয়সূচক শব্দাংশের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই কিন্তু অন্য শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে সেসব শব্দাংশকে উপসর্গ বলে।
নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠনে উপসর্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শুধু তাই নয়- শব্দার্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ, সংকোচন কিংবা পূর্ণতা সাধনে উপসর্গ ভূমিকা রাখে। উপসর্গগুলোর অর্থবাচকতা না থাকলেও অন্য শব্দের আগে বসে এগুলো অর্থের দ্যোতনা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: 'পয়া' শব্দের আগে 'অ' উপসর্গযোগে 'অপয়া' শব্দটি গঠিত হয়, যার অর্থ- কুলক্ষণযুক্ত। এখানে অর্থের সংকোচন হয়েছে। আবার 'পূর্ণ' শব্দের আগে 'পরি' উপসর্গযোগে 'পরিপূর্ণ' গঠিত হয়, যার অর্থ- সামগ্রিকভাবে ভরপুর। এখানে শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ হয়েছে। এভাবে সংস্কৃত, বাংলা ও বিদেশি উপসর্গের দ্বারা বাংলা ভাষায় নিত্য নতুন শব্দ গঠিত হচ্ছে। এ সকল দিক বিবেচনায় বলতে পারি, উপসর্গের ব্যবহার বাংলা শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।
উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে। ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না কিন্তু অন্য কোনো শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত এ ধরনের অব্যয়সূচক শব্দাংশকে উপসর্গ বলে। অর্থাৎ যে অব্যয়সূচক শব্দ বা শব্দাংশ ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে সে অব্যয়সূচক শব্দ বা শব্দাংশই হলো উপসর্গ।
উপসর্গের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- এর নিজস্ব কোনো অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলে অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি হয়। যেমন: 'অ' একটি উপসর্গ। এটি কোনো নির্দিষ্ট অর্থবাচক শব্দ নয়। তবে অন্য শব্দের আগে বসে এটি অর্থদ্যোতক হয়ে ওঠে। যেমন: 'কাজ' শব্দের আগে 'অ' উপসর্গটি যুক্ত হলে হয় অকাজ, যার অর্থ- নিন্দনীয় কাজ। এখানে অর্থের সংকোচন হয়েছে। এ রকম 'পূর্ণ' (ভরা) শব্দের আগে 'পরি' উপসর্গ যোগ করায় 'পরিপূর্ণ' হলো। এটি 'পূর্ণ' শব্দের সম্প্রসারিত রূপ। 'হার' শব্দের সঙ্গে 'আ' যুক্ত হয়ে 'আহার' (খাওয়া), 'প্র' যুক্ত হয়ে 'প্রহার' (মারা), 'বি' যুক্ত হয়ে 'বিহার' (ভ্রমণ), 'পরি' যুক্ত হয়ে 'পরিহার' (ত্যাগ), 'উপ' যুক্ত হয়ে 'উপহার' (পুরস্কার), 'সম' যুক্ত হয়ে 'সংহার' (হত্যা) ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন শব্দ তৈরি হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো বিভিন্ন অর্থের দ্যোতক। এখানে উল্লেখ্য যে, নাম বা কৃদন্ত শব্দের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে থাকলে উপসর্গের কোনো অর্থ নেই। কিন্তু কৃদন্ত বা নাম শব্দের সঙ্গে যুক্ত হলেই আশ্রিত শব্দকে অবলম্বন করে বিশেষ অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি করে। তাই বলা হয়, উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে।
ব্যতিক্রম: বাংলা ভাষায় 'অতি' ও 'প্রতি' দুটি উপসর্গের কখনো কখনো স্বাধীন প্রয়োগ হতে পারে। যেমন:
- ক. মাথা প্রতি পাঁচ টাকা খরচ।
- খ.অতি বাড়া ভালো না।
অর্থাৎ উপসর্গের নিজস্ব কোনো অর্থ না থাকলেও অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তা শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ বা সংকোচন করতে পারে। অতএব, আমরা বলতে পারি উক্তিটি যথার্থ।
ভাই যেইটা আসবেই লিখে দিছেন, ঐটাই আসছিলো, ময়মনসিংহ বোর্ডে উপসর্গের গুরুত্ব আসছিলো
প্রয়োজনীয় সকল সাজেশন পেতে সাথেই থাকুন।