সিরাজউদদৌলা নাটকের অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
এইচএসসি বাংলা ১ম পত্রের সহপাঠ অংশের নাটক "সিরাজউদ্দৌলা" এর গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর।
প্রশ্ন-উত্তর গুলোর পিডিএফ ডাউনলোড লিংক শেষের অংশে দেওয়া আছে।
গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: ট্র্যাজেডি হিসেবে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর: নায়ককে প্রধান করে কাহিনি এবং করুণ রস পরিবেশনের ফলে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। নায়ক কিংবা নায়িকামুখ্য করুণ রস পরিবেশন ট্র্র্যাজেডির ধর্ম। ট্র্যাজেডি নাটকে কোনো জটিল ও গুরুতর ঘটনার আশ্রয়ে বিশেষ ধরনের রস সঞ্চার করা হয়, যা আমাদের অনুভূতিকে অভূতপূর্ব আবহে আলোড়িত করে, ভয় ও করুণা জাগায়। এ ধরনের নাটকে শত বিপর্যয় সত্ত্বে নায়কের সুদৃঢ় মহিমান্বিত অবস্থান রূপায়িত হয়। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে আমরা দেখি নায়কমুখ্য কাহিনি এবং কারুণ রসের ব্যঞ্জনা ঘটেছে। সামরিক সামর্থ্য, উচ্চ মর্যাদা, শত্রুর চেয়ে বেশি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বে যখন নবাব সিরাজের নির্মম পরাজয় ও মৃত্যু ঘটে, তখন তা সত্যিকার অর্থেই ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন: ‘রজার ড্রেক প্রাণভয়ে কুকুরের মতো ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়েছে’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনা ফোর্ট উইলিয়ামে আক্রমণ করলে গভর্নর রজার ড্রেকের পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নবাব প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ অধিকার করে নেন এবং কলকাতার নামকরণ করেন ‘আলিনগর’। এই দুর্গের যুদ্ধে নবাব সেনার আক্রমণে ইংরেজদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। তখন গভর্নর রজার ড্রেক ভয় পেয়ে গোপনে পালিয়ে যান। কিন্তু হলওয়েল প্রকৃত সত্য গোপন করে নবাবকে জানায়, রজার ড্রেক কলকাতার বাইরে গেছেন। রজার ড্রেকের কাপুরুষতার কথা নবাব জানতেন বলেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলে তিনি ব্যঙ্গ করেছেন।
প্রশ্ন: ‘ভিক্টরি অর ডেথ, ভিক্টরি অর ডেথ’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে ক্যাপ্টেন ক্লেটন সেনাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন- ‘ভিক্টরি অর ডেথ, ভিক্টরি অর ডেথ’-বিষয়টি তার নেতৃত্বগুণ প্রকাশিত হয়েছে। ১৭৫৬ সালের ১৯ জুন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে নবাবের বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ হচ্ছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাদের কাছে ইংরেজরা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছিল। তাদের উৎসাহ দিতে ক্লেটন আলোচ্য কথাটি বলেছিলেন। কারণ তার মতে যুদ্ধে জয়লাভ অথবা মৃত্যুবরণ, এটাই ব্রিটিশ সেনাদের প্রতিজ্ঞা। প্রথমিকভাবে তাকে বেশ বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে দেখা গেলেও, শেষে দেখা যায় তিনি তার কথার মতো সাহসী নন।
প্রশ্ন: ওয়ালি খানকে চড় মারার জন্য ক্লেটনের এগিয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে ‘বাঙালি কাপুরুষ নয়’-এ কথা বলায় ওয়ালি খানকে চড় মারার জন্য ক্লেটন এগিয়ে যান। ফোর্ট উইলিয়ামে ইংরেজরা পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালে তাদের পক্ষের বাঙালি সেনা ওয়ালি খান ক্যাপ্টেন ক্লেটনকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনারা গোলাগুলি করতে করতে ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের কাছাকাছি এসে গেলে জীবন বাঁচানোর জন্য ওয়ালি খানের বিকল্প কিছু দেখেননি। কিন্তু ক্যাপ্টেন ক্লেটন বাঙালিদের কাপুরুষ বলে গালি দিলে বাঙালি ওয়ালি খান এ কথার প্রতিবাদ করায় ক্লেটন তাকে চড় মারার জন্য এগিয়ে যান। টাকার জন্য বাঙালিরা ইংরেজের পক্ষে গেলেও বাঙালিরা কাপুরুষ ছিল না, এমন প্রতিরোধ ক্লেটন সহ্য করতে পারেননি।
প্রশ্ন: ‘ব্রিটিশ সিংহ ভয়ে লেজ গুটিয়ে নিলেন, এ বড় লজ্জার কথা’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলার আক্রমণের মুখে ইংরেজরা পালিয়ে যাওয়ায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে ইংরেজরা নবাবের বিনা অনুমতিতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই নবাব ওই দুর্গ আক্রমণ করেন। ইংরেজ সেনারা নবাবের সেনাদের আক্রমণের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়লে ক্যাপ্টেন মিনচিন, কাউন্সিলর ফকল্যান্ড ও ম্যানিংহাম নৌকাযোগে দুর্গ থেকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। শেষ পর্যায়ে ক্যাপ্টেন ক্লেটনও গভর্নর ড্রেকের সঙ্গে পরামর্শের নাম করে আত্মরক্ষার্থে সব প্রতিজ্ঞা ভুলে দুর্গ থেকে পালিয়ে যান। এমতাবস্থায় বন্দি উমিচাঁদ হলওয়েলকে ব্যঙ্গার্থে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিলেন। মুখে বড় বড় কথা বললেও ইংরেজরা শক্ত প্রতিরোধে পালাতে বাধ্য হয়েছিল।
প্রশ্ন: ‘ফরাসিরা ডাকাত আর ইংরেজরা অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি, কেমন?’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে ফরাসিরা আর ইংরেজরা অর্থাৎ বিদেশি বেনিয়ারা যে এ দেশে এসেছে মূলত বাণিজ্য করার নামে অবাধলুণ্ঠন করতে, সিরাজউদ্দৌলা সে প্রসঙ্গেই এ কথা বলেছেন। ইংরেজরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার নিষেধ সত্ত্বে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায়। ইংরেজদের এই নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে নবাব ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করে নেন এবং ওয়াটস ও হলওয়েলকে বন্দি করেন। বন্দিদের কাছে নবাবের নির্দেশ অমান্যের কারণ জানতে চাইলে হলওয়েল জানায়, তারা ফরাসিদের কাছ থেকে আত্মরক্ষার জন্য দুর্গ নির্মাণ করছিল। হলওয়েলের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে নবাব কটাক্ষ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। ফরাসিরা ডাকাত হলে ইংরেজরাও নিশ্চয় ভালো কিছু নয়- সেটি নবাব ভালোই জানতেন।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের দাগানো বই ডাউনলোড করুন।
ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন: ‘তোমার ক্ষমতা ধ্বংস হবে সিরাজ’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে হিংসাপরায়ণ হয়ে ঘসেটি বেগম সিরাজউদ্দৌলাকে লক্ষ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছিলেন, কারণ নবাব তাকে মতিঝিল প্রাসাদ থেকে গৃহবন্দি করতে সেনাপতি মোহনলালকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সরিয়ে যারা অর্থ ও ক্ষমতা লাভের জন্য ষড়যন্ত্র করেছিলেন, তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ঘসেটি বেগম। সিরাজউদ্দৌলা নবাব হলে তা মেনে নিতে পারেননি ঘসেটি বেগম। তাই তিনি গোপনে মীর জাফর ও অন্যদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ঘসেটি বেগমের এই কর্মকাণ্ড বুঝতে পেরে তাকে মতিঝিল থেকে নবাবের মায়ের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে ক্ষুব্ধ হন ঘসেটি বেগম। আর তখনই তিনি নবাবকে উদ্দেশ্য করে এমন অভিশাপের উক্তিটি করেন।
প্রশ্ন: ‘আমার নালিশ আজ আমার বিরুদ্ধে’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে প্রজাদের দুর্ভোগের জন্য অন্য কাউকে দোষারোপ না করে আত্মগ্লানি প্রকাশ করতে গিয়ে সিরাজউদ্দৌলা এ কথা বলেছেন, যেখানে মূলত নবাবের অসহায়ত্ব ও দুর্বলতা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলার নবাব ব্রিটিশ বেনিয়া শক্তির কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। তার সাম্রাজ্যের লবণ চাষিরা ইংরেজ কুঠিয়ালদের নির্যাতনের শিকার। নবাব এর প্রতিবিধানে কিছুই করতে পারেননি। তাই প্রকাশ্য দরবারে তিনি সব অমাত্যকে ডেকে জানান নবাব হিসেবে তার অযোগ্যতায় এসব ঘটছে। আসলে তিনি সবাইকে জানালেন বাংলার রাজনীতিতে বিদেশিরা প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং এর পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছেন নবাবের অধিনস্ত লোকেরাই, যাদের প্রধান মীর জাফর আলী খান। তার সামনেই এসব কথা বলে নবাব ক্ষোভ ও বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন।
প্রশ্ন: ‘একটা দিন, মাত্র একটা দিনও যদি ওই মসনদে মাথা উঁচু করে আমি বসতে পারতাম।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে মীর জাফরের এ সংলাপে ক্ষমতার প্রতি তার লোলুপ মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। মীর জাফর সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি। আলীবর্দীর আমল থেকেই তার লোভ ছিল বাংলার মসনদের প্রতি। এ কারণেই সিরাজের শাসনকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। সিরাজের জায়গায় নিজে সিংহাসনে বসার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করেছেন। পবিত্র কোরআনে হাত রেখে শপথ করেও তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তার বাড়িতে ষড়যন্ত্র সভার একপর্যায়ে জগৎশেঠ, রাজবল্লভসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনার সময় প্রশ্নোক্ত বাক্যটি বলে তার সিংহাসনে বসার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন এবং বাস্তবিক অর্থে স্বপ্ন-বিভোর হয়ে ওঠেন।
প্রশ্ন: ‘আপনারা ইচ্ছা করলে আমাদের ক্ষতি করতে পারেন।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে ক্লাইভের এ উক্তিতে নবাব সিরাজের অমাত্যবর্গের বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটেছে। মিরনের বাড়িতে ষড়যন্ত্র সভায় ক্লাইভ নারীর ছদ্মবেশে আসেন। জগৎশেঠ ও রাজবল্লভ ক্লাইভের দুঃসাহস দেখে অবাক হন এবং জানান নবাব যদি জানতে পারেন ক্লাইভ এখানে তবে আর উপায় থাকবে না। বিচক্ষণ ক্লাইভ স্পষ্ট জবাব দেন, নবাবের কোনো শক্তি নেই। যার চারপাশে সবাই বেইমান তিনি কী করে ক্লাইভের ক্ষতি করবেন বা শাস্তি দেবেন। বেইমান হিসেবে বরং ওরাই ক্লাইভের ক্ষতি করতে পারেন। বেইমান চিরকাল বেইমান, ক্লাইভ তা জানতেন।
প্রশ্ন: ‘উমিচাঁদ এ যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে ক্লাইভ তাকে এ যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক বলেছিলেন, কারণ উমিচাঁদ অর্থের মোহে অন্ধ হয়ে যেকোনো ধরনের প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের কাজ করতে পারেন। উমিচাঁদ অর্থ উপার্জনের জন্য লাহোর থেকে বাংলায় এসেছিল। তার ছিল অর্থের প্রতি সীমাহীন লোভ। অর্থের মোহে পড়ে তিনি যেকোনো কাজ করে দিতে পারতেন। তার চরিত্রে নীতি-নৈতিকতার বালাই ছিল না। অর্থের লোভে তিনি নবাবকে ছেড়ে ইংরেজদের পক্ষে যোগ দিয়েছেন, আবার যদি নবাবের কাছ থেকে বেশি অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দেয়, তবে তিনি ইংরেজদের ত্যাগ করে নবাবের পক্ষে চলে যেতে দ্বিধা করবেন না। এসব দিক বিবেচনায় ক্লাইভ উমিচাঁদকে এ যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেছেন।
প্রশ্ন: ‘শুভ কাজে অযথা বিলম্ব করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে মীর জাফর ষড়যন্ত্রের দলিলে স্বাক্ষর করা প্রসঙ্গে এ কথা বলেছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য তার সিপাহসালার মীর জাফর ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা মিরনের বাসগৃহে একত্রিত হয়েছিলেন। যুদ্ধে ক্লাইভ বিজয়ী হলে কে কতটা ভাগ পাবেন, তা নিয়ে দলিল তৈরি করেছিলেন তারা। কিন্তু দলিলে সই করতে গিয়ে চক্রান্তকারীরা তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তখন বিলম্ব না করে দলিলে সই করার মাধ্যমে নিজ স্বার্থকে পাকাপোক্ত করার জন্য মীর জাফর আলোচ্য উক্তিটি করেন। ‘ক্লাইভের গর্দভ’ বলে কুখ্যাত মীর জাফর বুঝতেই পারেননি বাংলাকে তারা চিরতরে ব্রিটিশ শক্তির কাছে বিক্রি করে দিচ্ছিলেন।
প্রশ্ন: ‘সবাই মিলে সত্যিই আমরা বাংলাকে বিক্রি করে দিচ্ছি না তো?’-ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে ক্লাইভের ষড়যন্ত্রের দলিলে স্বাক্ষর দিতে গিয়ে মীর জাফর নিজের মনের শঙ্কা প্রকাশ করে এ কথা বলেছিলেন, যা ক্ষণিক বিবেক জাগরণের মতো ব্যাপার ছিল। নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলান মীর জাফরসহ নবাবের পরিষদবর্গের প্রায় সবাই। ষড়যন্ত্রের জন্য নিজেদের মধ্যে সমঝোতার দলিল তৈরি করেন ক্লাইভ। ক্লাইভ এ দলিলে সই করতে বললে মীর জাফর ক্ষণিকের জন্য উদ্বিগ্ন হন। তার মনে হয়, নিজেদের স্বার্থের জন্য দেশের চূড়ান্ত ক্ষতি সাধন করছেন না তো তারা? দেশটা যেন বেনিয়াদের হাতে বিক্রি হয়ে গেল। আসলে লোভী, অদূরদর্শী মীর জাফর ক্ষণিকের জন্য বিবেক দ্বারা তাড়িত হলেও তা ছিল অর্থহীন।
প্রশ্ন: ‘আমরা এমন কিছু করলাম যা ইতিহাস হবে।’- উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ এ উক্তিটি করেছিলেন বাংলাকে চিরকালের জন্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে যাচ্ছেন, এমন প্রত্যাশা থেকে। সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করে বাংলার সিংহাসন করায়ত্ত করতে চান বিশ্বাসঘাতকের দল। তাই নিজ নিজ সংকীর্ণ স্বার্থকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য তারা ইংরেজদের সঙ্গে একটি ঘৃণ্য চুক্তি করেন। এ ঘটনার মাধ্যমেই পাক-ভারত উপমহাদেশে ইংরেজদের দীর্ঘ শাসনের বীজ রোপিত হয়। চুক্তিপত্রে এক এক করে জগৎশেঠ, মীর জাফর, রাজবল্লভ সবাই স্বাক্ষর দেন। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলার পরাধীনতার পথ অবারিত হয়। ক্লাইভ এ ঘটনাকে নিজের বিজয় বলে মনে করেন। সত্যিই তিনি ইতিহাস করেছিলেন বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের শক্ত ভিত তৈরিতে।
প্রশ্ন: ‘তার নবাব হওয়াটাই আমার মস্ত ক্ষতি’- উক্তিটির তাৎপর্য লেখ।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে সিরাজউদ্দৌলা নবাব হওয়ায় ঘসেটি বেগমের যে স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় সে প্রসঙ্গে ঘসেটি বেগম এ কথা বলেছিলেন। আলীবর্দী খাঁ তার মৃত্যুর আগে দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার দিয়ে যান। কিন্তু বড় মেয়ে ঘসেটি বেগম এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। একদিন ছোট বোন আমিনার সামনে ঘসেটি বেগম সিরাজের অমঙ্গল কামনা করলে আমিনা বলেন, ‘সিরাজ তোমার কোনো ক্ষতি করেনি, বড় আপা।’ এর উত্তরে ঘসেটি বেগম ক্ষতির ধরন ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘তার নবাব হওয়াটাই তো আমার মস্ত ক্ষতি।’ সিংহাসনের প্রতি চরম লোভী মানসিকতা ও স্বার্থপরতার বিষয়টি এখানে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন: ‘আমার সারা অস্তিত্ব জুড়ে কেবল যেন দেয়ালের ভিড়’- উক্তিটির তাৎপর্য লেখ।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বেদনাভারাক্রান্ত ও ঘনায়মান অসহায় অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে। শাসনকার্য পরিচালনার শুরু থেকেই নবাব সিরাজউদ্দৌলা চিন্তা ও কাজের মাঝে বাধা পেয়েছেন। ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্র নবাবের শাসনকার্য পরিচালনায় প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই ঘরে, বাইরে, দরবারে, সবখানে তার মনে হয়েছে শুধু প্রতিবন্ধকতার দেয়াল। আর এই দেয়ালগুলো তার অস্তিত্বকে সংকটে ফেলেছে, যা স্ত্রী লুৎফুন্নিসার সঙ্গে কথা বলে নিজের চরম দুর্বলতাকেই প্রকাশ করেছেন।
প্রশ্ন: ‘ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে এ মন্তব্যটি দ্বারা নবাব সিরাজউদ্দৌলা বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের অপকর্ম প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন। রাজ অমাত্যরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার কর্তৃত্ব রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করবেন বলে পবিত্র গ্রন্থ নিয়ে শপথ করেছিলেন। কিন্তু নবাবকে পরাজিত করতে গোপনে অনেকেই ষড়যন্ত্র করেছিলেন ইংরেজদের সঙ্গে, যা তাদের কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পেয়েছে। এদের প্রধান হলেন প্রধান সেনাপতি মিরজাফর অমাত্যদের এই বিশ্বাসঘাতকতার দিকটিই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে।
প্রশ্ন: ‘কত বড় শক্তি, তবু কত তুচ্ছ।’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে ইংরেজদের তুলনায় শক্তি ও সামর্থ্যে বেশি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বাসঘাতকদের কারণে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী জেনেই নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রশ্নোক্ত কথাটি মীরমদনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে সেনা সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি; অথচ ইংরেজদের মাত্র তিন হাজারের বেশি সেনা ছিল না। অস্ত্র ও গোলা-বারুদেও সিরাজউদ্দৌলার তুলনায় ইংরেজরা ছিল নগণ্য। মিরমর্দান যে যুদ্ধ-পরিকল্পনা-কৌশল নবাবকে দেখান তাতে কোনোভাবেই ইংরেজদের জয়ী হওয়ার কথা নয়। কিন্তু নবাব আশঙ্কা করেন তার সব সিপাহি ও সেনাপতি লড়বে না, সব কামান থেকে গোলা ছুটবে না। কারণ বিশ্বাসঘাতক সেনাপতি মীর জাফর ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। প্রধান সেনাপতি বেইমান হলে যুদ্ধজয়ের সম্ভাবনা আর থাকে না। যুদ্ধের আগেই তা অনুভব করে নবাব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।